কিডনি কিভাবে ভালো রাখবেন জেনে নিন
আপনি কি কি রোগ নিয়ে ভাবছেন? কিডনি কিভাবে ভাল রাখবেন সেটা জানেন না। তাহলে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকুন। আমরা আজকে আমাদের এই আর্টিকেলটি কিডনি কিভাবে ভালো রাখবেন সেটা নিয়ে আলোচনা করব। তাই আশা করছি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যদি আমাদের সাথে থাকুন। তাহলে আপনি কি কিভাবে যত্ন রাখতে হয়। কিভাবে সুস্থ রাখা যা। কিডনি ভালো থাকবে, কিডনিতে কি ধরনের সমস্যা হতে পারে।এই নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেলটি আলোচনা।
কিডনি ভালো রাখতে কী করবেন
কিডনি ভালো রাখতে সবারই পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। এই পানি অবশ্যই হতে হবে নিরাপদ। অসুস্থতায় (জ্বর, ডায়রিয়া, বমি প্রভৃতি) এবং ব্যায়ামের পর পানির চাহিদা বাড়ে। বিশেষত ডায়রিয়া বা বমি হলে পর্যাপ্ত পানি, স্যালাইন এবং অন্যান্য তরল খাবার খেতে হবে অবশ্যই। গর্ভবতী এবং স্তন্যদায়ী মায়ের জন্যও পানির চাহিদা বেশি। আবহাওয়ার পরিবর্তনে পানির চাহিদা কমবেশি হয়। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।
রোজ অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন (রোজ না পারলেও সপ্তাহের অধিকাংশ দিন)। হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম ভালো।
ধূমপান, পান-জর্দা, অ্যালকোহল বর্জনীয়। ধূমপায়ীর কিডনিতে রক্তসঞ্চালন কমে যায়। কিডনির কর্মক্ষমতা কমে যায়। ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ে।
কিডনির ক্ষতি হয় যে ১০ কারণে
- ১। পর্যাপ্ত পানি পান না করা
- ২।দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব না করে থাকা
- ৩। বেশি লবণ খাওয়া
- ৪। ক্যাফেইনে বেশি আসক্তি
- ৫।ব্যথানাশকের প্রতি নির্ভরশীলতা
- ৬।বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়া
- ৭।অ্যালকোহলে আসক্তি
- ৮।ধূমপানে আসক্তি
- ৯।সর্দি-কাশিকে পাত্তা না দেওয়া
- ১০। রাত জেগে থাকা
কি কি ধরনের সমস্যা হতে পারে কিডনিতে?
কিডনিতে খুব সাধারণত একটি রোগ হলো কিডনিতে পাথর। বর্তমান এমন মানুষ খুবই কম আছে যে সে জানে নাকি নিতে পাথর হয় এ কথাটি এমন মানুষ শুনে নাই। সাধারণত কিডনিতে পাথর ছাড়াও আরো অনেক ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। সেগুলো আমরা জানিনা কিডনি রোগটা দেখা যায় না এই জন্য মানুষ অতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। আসলে কিডনি একটা মানুষের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ।
বিশ্বের প্রতিবছরই কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে। শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে কিডনি। কিন্তু আমরা এটাই জানি না যে কি নিয়ে কিভাবে যত্ন রাখতে হয়। বা এর কারণে কি কি রোগ দেখা দেয়। আমরা সাধারণত কিডনি রোগ বলতে কিডনিতে পাথর হওয়া বুঝে থাকি।
এর বাইরেও কিডনিতে অনেক ধরনের রোগ হয়ে থাকে যেটা আমরা জানি না। সেগুলো হল কিডনিতে ইনফেকশন, টিউমার, গ্লোমেরুলো নেফ্রাইটিস ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে।
সমস্যা যেমনই হোক, সকল সমস্যা দূর করতে অল্প কিছু নিয়ম মেনে চললে আর কোন ভয় থাকে না। তবে কিডনির যে কোন ধরনের সমস্যা অনুভব হলে দেরি না করে সরাসরি ডাক্তার এর পরামর্শ নিন ।
চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ বাঞ্ছনীয়
১।চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন না করাই ভালো। বিশেষত ব্যথানাশক সেবন করা একেবারেই উচিত নয়।
২।৪০ বছর বয়স পেরোনোর পর কোনো সমস্যা না থাকলেও সবারই বছরে একবার রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তের চর্বি এবং প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা করানো উচিত (প্রস্রাবে প্রোটিন এবং সুগারের উপস্থিতি নির্ণয় করার জন্য)। এ ছাড়া কিডনির কর্মক্ষমতা দেখার জন্য রক্ত পরীক্ষা করানো উচিত। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের ৩২ শতাংশ জানেনই না যে তিনি উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত।
আবার জানা থাকার পরও অর্ধেক মানুষেরই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নেই। শেষ পর্যন্ত মোট রোগীর মাত্র ২৫ শতাংশ পারছেন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে। একই ধরনের কথা ডায়াবেটিসের জন্যও প্রযোজ্য। প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ জানেনই না তিনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। কিন্তু এই রোগগুলো থাকার কারণে রোগীর কিডনি ধীরে ধীরে কর্মক্ষমতা হারাচ্ছে নীরবে।
৩।ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হয়ে থাকলে কিংবা রক্তের চর্বি বেড়ে থাকলে অবশ্যই তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিডনি বিকলের প্রধান কারণ এগুলোই।
৪।কিডনির রোগের লক্ষণগুলোকে জানুন। ক্ষুধামান্দ্য, বমিভাব, প্রস্রাব কম হওয়া, পায়ে পানি আসা প্রভৃতি হতে পারে কিডনি রোগের লক্ষণ। লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসা নিন।
কিডনি রোগীদের খাবার কেমন হওয়া উচিত
দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ) আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণত অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির নানা প্রদাহ থেকে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ হয়ে থাকে। এতে কিডনির কার্যকারিতা ধীরে ধীরে হ্রাস পায়।
কিডনির প্রধান কাজ হলো রক্ত থেকে বর্জ্য ও অতিরিক্ত তরল ফিল্টার (ছেঁকে) করে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেওয়া। যখন কিডনির কার্যকারিতা কমে যায়, তখন শরীরে বিপজ্জনক মাত্রার তরল, ইলেকট্রোলাইট ও বর্জ্য জমা হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের শেষ পর্যায়ে কিডনি বৈকল্য হয়ে গেলে কৃত্রিম ফিল্টারিং (ডায়ালাইসিস) বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হয়।
লক্ষণ
● বমি বমি ভাব, বমি, ক্ষুধামান্দ্য। ক্লান্তি ও দুর্বলতা। ঘুমের সমস্যা, প্রস্রাব কমবেশি হওয়া। মনোযোগ কমে যাওয়া। পা ও গোড়ালি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি।
● তবে শুরুতে কোনো উপসর্গ না-ও থাকতে পারে এবং কেবল রুটিন পরীক্ষায় ধরা পড়ে।
কেন পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ
● রক্তে লবণ ও খনিজগুলোর ভারসাম্য বজায় রাখে সুস্থ বা স্বাস্থ্যকর কিডনি। কিডনি রোগীর পুষ্টি ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্য হলো, শরীরে ইলেকট্রোলাইট, খনিজ পদার্থ ও তরলের মাত্রা ভারসাম্য বজায় রাখা।
● ডায়ালাইসিস করা ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ ডায়েটের প্রয়োজন। ডায়ালাইসিস চিকিত্সার মধ্যে তরল সীমাবদ্ধ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ডায়ালাইসিসের বেশির ভাগ রোগী খুব কম প্রস্রাব করেন। প্রস্রাব ছাড়া তরল শরীরে তৈরি হবে এবং হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসে অত্যধিক তরল সৃষ্টি করবে।
● সঠিক সময়ে খাবার খেতে হবে। সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও ফসফরাসযুক্ত খাবার সীমিত করা বা এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়।
● দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগীকে প্রতি কেজি ওজনের জন্য শূন্য দশমিক পাঁচ থেকে শূন্য দশমিক আট গ্রাম প্রোটিন বরাদ্দ করা যেতে পারে। যদিও এটা নির্ভর করবে রোগীর অবস্থার ওপর।
● ডায়ালাইসিস শুরুর আগে প্রোটিনের পরিমাণ সীমিত রাখতে হয়।
● যাঁরা ডায়ালাইসিসে আছেন, তাঁদের বাড়তি প্রোটিন খাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কারণ, ডায়ালাইসিস চিকিৎসা রক্ত থেকে প্রোটিনকে সরিয়ে দেয়। রক্ত থেকে অপসারিত প্রোটিনের পরিমাণ ডায়ালাইসিস চিকিত্সার ধরনের ওপর নির্ভর করে।
কিডনি ভালো রাখতে পান করুন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি
পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করুনকিডনি সুস্থ রাখতে হলে বিশুদ্ধ পানি পানের বিকল্প নেই। প্রচুর পানি পান করুন। পানি কিডনিকে সচল রাখতে ও কিডনির স্বাভাবিক কার্যকলাপে সাহায্য করে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন মানুষ দৈনিক ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে কিডনি ভালো থাকবে।
কোমল পানীয়, কফি, চা ইত্যাদির ব্যাপারে হতে হবে সতর্ক
- প্রায়শই আমরা কোমল পানীয়, কফি, চাসহ বিভিন্ন ধরণের খাবার গ্রহণ করি।
- এ সকল খাবার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করে।
- কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না যে এটি পানিস্বল্পতাও তৈরি করে শরীরে।
- শরীরে পানিস্বল্পতা কিন্তু কিডনিতে পাথর হবার অন্যতম একটি কারণ।
- সুতরাং এসকল খাবার গ্রহণ করার ব্যাপারে খুব সতর্ক হোন, যথাসম্ভব বিরত থাকুন।
ধূমপান আর করবেন কি!
- কেবল আমাদের দেশেই নয়, বরং সারাবিশ্বেই ধূমপান একটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
- ধূমপানের কারণে একদিকে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- তবে কেবল ফুসফুস বা হৃদরোগের কারণই নয়, ধূমপান হতে পারে কিডনিতে ক্ষতি হবার মারাত্মক কারণ।
- তাই এই বদঅভ্যাস থেকে যতদ্রুত সম্ভব ফিরে আসুন।
পেইন কিলার ব্যবহার করতে গেলে হতে হবে সাবধান
- আজকাল প্রচুর ফার্মেসি গড়ে উঠেছে।
- এ সকল ফার্মেসিতে থাকা ব্যবসায়ীদের কাছে সাধারণ মানুষ সামান্য ব্যাথা হলেই ছুটে যান।
- আর প্রচুর পরিমাণ পেইন কিলার গ্রহণ করেন তাদের পরামর্শে।
- এরূপ সামান্য ব্যথাতে পেইন কিলার খাবার অভ্যাস ত্যাগ করুন।
- কারণ পেইন কিলার কিডনির কোষের অতিরিক্ত ক্ষতি করে ফেলে।
- ব্যথার পরিমাণ একান্তই অসহ্য হলেই গ্রহণ করুন নচেৎ নয়।
অতিরিক্ত লবণ খাবেন না, বন্ধ করুন
- কিডনির জন্য অন্যতম ক্ষতিকর হলো অতিরিক্ত পরিমাণ লবণ গ্রহণ।
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ চামচ লবণের চাহিদা থাকে বলে গবেষণা জানায়।
- সুতরাং অতিরিক্ত লবন খাওয়া পরিহার করুন, কিডনি কে সুস্থ রাখুন।
- অতিরিক্ত লবণ খেলে এর সোডিয়াম কিডনি জমে থাকে, কিডনির ক্ষতি করে।
প্রস্রাবের বেগ হলে আটকে রাখবেন না
- এই অভ্যাস কমবেশি আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারের সকলেরই আছে।
- কিন্তু অনেকক্ষণ প্রস্রাব চেপে রাখবেন না। এতে কিডনিতে চাপ পড়ে, হঠাৎ করেই হতে পারে ব্যাথা।
- চিকিৎসকরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এধরণের অভ্যাসের কারণে কিডনি নষ্ট হতে পারে।
চর্বি জাতীয় খাবার কম করে খান
- আমিষের অভাব পূরণে মাংস কম খান। তার বদলে মাছ এবং শাক-সবজি বেশি করে খান।
- চর্বি জাতীয় খাবার কিডনির জন্য খুব ক্ষতিকারক বলেই প্রমাণিত হয়েছে। তার এটি হজম করতেও প্রচুস সময় লাগে ।
- তাছাড়া মাংসের ফাইবার কিডনির ওপর চাপ পড়ে যায়।
- সুতরাং মাংস খান খুব মেপে মেপে।
নিয়ন্ত্রনে রাখুন রক্তচাপ
- রক্তচাপ বেশি থাকলে কিডনিতে ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- তাই রক্তচাপ সবসময় স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করুন।
- সেই সাথে নিয়মিত ব্যায়াম শরীরকে রাখবে সুস্থ ও সবল।