কিভাবে নখের যত্ন নিবেন
আসসালামু আলাইকুম, অবশ্যই আল্লাহর রহমতে সকলে ভালো আছেন। আপনারা অনেকেই আছেন যারা তাদের নখের সমস্যায় ভুগছেন। ঠিকমতো নখের যত্ন নিতে পারতেছেন না। কিভাবে নিবেন, কি কি করলে নখ ভালো থাকবে। এ সকল বিষয়ে নিয়ে আমাদের আজকের আর্টিকেল। তাই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। চলুন দেখে নেয়া যাক নখ ভালো রাখতে কি করতে হবে।
কিভাবে নখের যত্ন করবেন?
বিভিন্ন রোগে নখের রং, পুরুত্ব ও বৃদ্ধিতে পরিবর্তন হয়। কোনো পরিবর্তনই অবহেলা না করে প্রতিকার করা উচিত। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের প্রোটিনের ঘাটতি হলে নখ পাতলা ও ভঙ্গর হয়ে যেতে পারে। আঘাতের মাত্রা বেশি হলে নখ-মাংস থেকে আলাদা হয়ে পড়ে। তো ৬ মাসর মধ্যে সুস্থ না তৈরি হয়ে যায়।
আমরা অনেকেই আছি যারা কিনা দাগ দিয়ে নখ কামড়ায়, এতে করে নকের অনেক ক্ষতি হয় স্বাভাবিক একটি দিন নষ্ট হয়ে যায়। আবার মুখ থেকে জীবাণু নাক ও নখের আশেপাশের ত্বকে প্রবেশ করে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ায়। দীর্ঘ সময় নেলপালিশ রেখে দিলে নখের নষ্ট হয়ে যায়।
আমরা অনেকেই আছি যারা ধূমপান করে থাকি। যারা ধুমপান করেন তাদের নখ হলুদ হয়ে যেতে পারে। পানি ও ডিটারজেন্ট নক্ষয় করে। নিয়মিত নখ না কাটলে, নখ বেশি কেটে ফেললে কিংবা নখের কোন অতিরিক্ত কাটলে সমস্যা হতে পারে। নখ ও নখের আশেপাশের ত্বক ব্যাকটেরিয়া, বা ছত্রাক দিয়ে আক্রান্ত হলে নগর রং বদলে যেতে পারে।
বিভিন্ন কারণে নখের পরিবর্তন আসতে পারে তাদের মধ্যে অন্যতম কারণ গুলো হলঃ সোরিয়াসিস, আয়রনের অভাবজনিত রক্তশূন্যতা, ডায়াবেটিস, হার্ট, লিভার, ফুসফুসের রোগ ও থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা থাকলে বা কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও নখের নানা পরিবর্তন আসতে পারে।
নখ হলুদ হয়ে গেলে কি করবো?
খাবার খেয়ে নখ হলুদ হলুদ লাগছে, এর সমাধান কী? আবার নখগুলো একটু বড় হলেই কালচে হয়ে যায় কারও কারও। তখন খুবই বেমানান লাগে দেখতে, তবে এর একটা সমাধান আছে। নখের শাইন ঠিক রাখতে লেবুর টুকরা দিয়ে নখে সামান্য ঘষে নিয়ে একটা টুথব্রাশ দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এটি প্রতি দুই সপ্তাহে একবার করে নিলে নেইলস সুন্দর থাকবে।
কেন নখে ময়েশ্চারাইজার প্রয়োজন?
যদি আঙ্গুলের নেইল বেড এবং নেইল ম্যাট্রিক্স ড্রাই হয়ে থাকে, তাহলে তা নখকে ড্যামেজ করার সাথে সাথে নখকে তাড়াতাড়ি বাড়তে দেয় না। নেইল বেড হল আমাদের নখের শক্ত অংশের নিচে যে হালকা গোলাপি রঙয়ের সফট টিস্যু রয়েছে সেটা। আর নেইল ম্যাট্রিক্স হল নখের ঠিক যেই অংশ থেকে নতুন নখ বের হয়। তাই নেইল বেড এবং নেইল ম্যাট্রিক্স যেন ড্রাই না হয়, তাই একটা ময়েশ্চারাইজিং হ্যান্ড ক্রিম লাগাতে হবে আঙ্গুলে।
খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন প্রয়োজন
ফুড হ্যাবিটও এখানে রিলেটেড। গাছে নিয়ম করে পানি দিলে যেমন গাছের গ্রোথ ভালো হয়, ঠিক তেমনি আমরা শরীরের চাহিদা অনুযায়ী খেলে আমাদের স্কিনে পজেটিভ পরিবর্তন দেখা যাবে। নেইল ভেঙে যাওয়া শরীরে পুষ্টির ঘাটতির একটা সাইন। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যের তালিকায় এমন কিছু খাবার রাখতে হবে যা আমাদের নখের গ্রোথের জন্য ভালো কাজ করবে এবং নখকে করবে মজবুত যেন তা সহজে না ভাঙ্গে।
১। প্রোটিন
আমাদের নখ কেরাটিন দিয়ে তৈরি এবং কেরাটিন এক ধরনের প্রোটিন যা আমাদের শরীরের কোষ গঠন করে। তাই যখন শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেয় তখন নখগুলো সহজে ভেঙ্গে যায়। তাই প্রোটিন জাতীয় খাবার রেগুলার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন মাংস, মাছ, সি- ফুড, ডিম, ডাল এবং দুধ খেলে নখ মজবুত হবে।
২। ভিটামিন সি
ভিটামিন সি আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। যদি শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি হয় তখন আমাদের নখ ভেঙ্গে যায় এবং নখের গ্রোথও কমে যায়। ভিটামিন সি কোলাজেন প্রডাকশন বাড়ায়, যার কারনে নখ মজবুত হয়। তাই ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেলে নেইলস সুন্দর ও মজবুত থাকবে। লেবু, মালটা, পেয়ারা এগুলো ভিটামিন সি তে ভরপুর।
বাড়িতেই নখের যত্ন
আমরা বাড়িতেই নখের ভালো যত্ন নিতে পারব। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাই নখের সুস্থতার মূল শর্ত। নখের নিচে সহজেই ময়লা জমে যায়, অসাবধানতায় যার কারণে হতে পারে পেটের পীড়াও। সুস্থ-সুন্দর থাকতে তাই পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই। আর নিয়মিত নখ কেটে ঠিকঠাক মাপে, ঠিকঠাক আকৃতিতে রাখতে হবে। নখের ওপরের দিক, ভেতরের দিক পরিষ্কার রাখতে হবে।
কুসুম গরম পানিতে খানিকটা মৃদু ধাঁচের (লাইট) শ্যাম্পু মিলিয়ে নিন। এতে হাত ডুবিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। এরপর ব্রাশে মৃদু শ্যাম্পু নিয়ে সেটির সাহায্যে নখ পরিষ্কার করে ফেলুন। নখের পাশ থেকে হালকা চামড়া ওঠা থাকলে কিউটিকল কাটার দিয়ে এবার সাবধানে কেটে ফেলুন (চামড়ার এ ধরনের অংশ কখনো টেনে তোলার চেষ্টা করবেন না)। এরপর নেইলফাইল ব্যবহার করুন। ঘষে নিন। চাইলে এরপর নেলপলিশ লাগাতে পারেন। এরপর নখ ও নখের চারপাশে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিন। নখ ও ত্বকের এই অংশটুকু কোমল থাকবে।
পায়ের নখের যত্নের জন্যও নিয়মটা একই। সপ্তাহে একবার করে এভাবে হাত ও পায়ের নখের যত্ন নিলে সুস্থ-সুন্দর নখ পাবেন। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলেও নিদেনপক্ষে ১৫ দিন অন্তর এভাবে হাত ও পায়ের নখের যত্ন নিতেই হবে।
কাজে ও বিশ্রামে
রান্নাঘরে কাজ করার সময় হাত ও নখে নানান ধরনের কষ লেগে যেতে পারে। এ রকম হলে সঙ্গে সঙ্গে টমেটো কিংবা লেবুর টুকরা ঘষে হাত-নখ পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো। তাহলে আর কালচে দাগ বা আঠালো ভাব হবে না, নখের তেমন কোনো ক্ষতিও হবে না।
রান্নাঘরের কাজের সময় হাতে গ্লাভস পরতে পারেন।l ঘুমানোর আগে নখে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিতে পারেন।
আরও পড়ুন