ক্রিপ্টোকারেন্সি বাংলাদেশ ২০২৪
বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির বর্তমান অবস্থা (২০২৪)
বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বর্তমানে একটি জটিল পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থান:
- নিষেধাজ্ঞা: বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারকে আইনত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
- কারণ: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সি অস্থির, নিয়ন্ত্রণহীন এবং অবৈধ লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে।
- ঝুঁকি: ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগে সঞ্চয় হারানোর ঝুঁকি রয়েছে এবং এটি দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারে।
জনগণের আগ্রহ:
- উচ্চ আগ্রহ: যদিও ক্রিপ্টোকারেন্সি আইনত নিষিদ্ধ, তবুও বাংলাদেশে অনেকেই এর প্রতি আগ্রহী।
- কারণ: ক্রিপ্টোকারেন্সির দ্রুত মূল্য বৃদ্ধি এবং আর্থিক স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি অনেককে আকৃষ্ট করে।
- চ্যালেঞ্জ: তবে, আইনী জটিলতা এবং ঝুঁকির কারণে বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিনিয়োগ করা কঠিন।
বর্তমান চিত্র:
- অবৈধ লেনদেন: অনেকেই গোপনে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন করে থাকে।
- সরকারের নজরদারি: সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কিত অবৈধ কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নজরদারি বাড়িয়েছে।
- ভবিষ্যত: বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যত এখনও অনিশ্চিত। সরকার হয়তো ভবিষ্যতে ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কিত নতুন নিয়মকানুন জারি করতে পারে।
বাংলাদেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের ঝুঁকি:
- মূল্যের অস্থিরতা: ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য খুব দ্রুত ওঠানামা করে।
- নিয়ন্ত্রণের অভাব: ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।
- অবৈধ কার্যকলাপের ঝুঁকি: ক্রিপ্টোকারেন্সি অবৈধ লেনদেন, জুয়া এবং অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপে ব্যবহৃত হতে পারে।
- তথ্য চুরির ঝুঁকি: ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের সময় ব্যক্তিগত তথ্য চুরির ঝুঁকি থাকে।
অবৈধ তবু ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক দশক ধরে ক্রিপ্টোকারেন্সি (ডিজিটাল বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা) ব্যবহারের প্রচলন দেখা যায়। অনেক দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারে আইনগত বাধা রয়েছে। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবহার বাড়ছে।
গত বছর সবচেয়ে বেশি ভারত ও নাইজেরিয়ায় ক্রিপ্টোকারেন্সিসহ বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল মুদ্রার ব্যবহার বেড়েছে। এক প্রতিবেদনে এমন মুদ্রার ব্যবহার বাড়ার প্রবণতার কথা জানা যায়। ব্লকচেইন অ্যানালিটিকস কোম্পানি চেনালাইসিসের একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদনে ১৫১টি দেশে ডিজিটাল মুদ্রা হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারের নানা তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। কোন দেশ কতটা ক্রিপ্টোকারেন্সি গ্রহণ করছে, সে তালিকাও প্রকাশ করা হয়।
চারটি বিভাগে বিভিন্ন দেশকে তালিকাবদ্ধ করা হয়েছে। তালিকার শীর্ষে আছে ভারত, নাইজেরিয়া ও ইন্দোনেশিয়া। কোন দেশ কেমন ক্রিপ্টো গ্রহণ করছে, সেই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫ দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশের চেয়ে পেছনে আছে মিয়ানমার, তাদের অবস্থান ৭৮।
পাকিস্তানের অবস্থান ৯, শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৭২, নেপালের অবস্থান ৭১ নম্বরে। তালিকা অনুসারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ৪, কানাডা ১৮, রাশিয়া ৭, চীন ২০, জাপান ২৩ ও অস্ট্রেলিয়া ৩৯ নম্বরে।
চেনালাইসিসের বৈশ্বিক সূচকের শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে ৭টি মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশ। ভারতে দুই বছর ধরে ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবহারের বেশি প্রবণতা দেখা গেছে। ভারত ২০১৮ সাল থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে।
দেশটির আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে নিয়ম মেনে না চলার জন্য ৯টি অফশোর ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেছিল।
চেনালাইসিসের গবেষণাপ্রধান এরিক জার্ডিন বলেন, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ভারতে ক্রিপ্টো বেশ ভালোভাবেই বিস্তৃত হচ্ছে। বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ বাইন্যান্সকে ভারতে জরিমানার মুখোমুখি হতে হয়। অন্যদিকে ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জ কুকয়েন কেও জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়েছিল।
ব্যবহারের আইনগত অনুমতি না থাকলেও তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫। বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১ সালে ব্যবহারকারীদের ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় লেনদেনে বিরত থাকতে বলেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কোন দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষের দ্বারা ইস্যু করা নয় বলে তখন ঘোষণাপত্র জারি করেছিল।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যাবসা কি হালাল?
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা: ইসলামি দৃষ্টিকোণ
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা হালাল কি না এই প্রশ্নটি ইসলামি আর্থিক লেনদেনের একটি জটিল বিষয়। ইসলামে যেকোনো ধরনের লেনদেনের জন্য কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি নতুন ধারণা হওয়ায়, এটি ইসলামি শরীয়াহর সকল শর্ত পূরণ করে কিনা তা নিয়ে ইসলামি পণ্ডিতদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত রয়েছে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি বেবসা হালাল হওয়ার জন্য কিছু শর্ত:
- মালের মালিকানা: ক্রিপ্টোকারেন্সির মালিকানা স্পষ্টভাবে নির্ধারিত হতে হবে।
- লেনদেনের উদ্দেশ্য: লেনদেনের উদ্দেশ্য হতে হবে হালাল। জুয়া বা অন্য কোন অবৈধ কাজের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করা যাবে না।
- ধারণাগত অনিশ্চয়তা: ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য অস্থির এবং এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এই কারণে অনেকে মনে করেন যে, ক্রিপ্টোকারেন্সি বেবসায় জুয়ার মতো ঝুঁকি রয়েছে।
- অবৈধ কার্যকলাপ: ক্রিপ্টোকারেন্সি অনেক সময় অবৈধ কার্যকলাপে ব্যবহৃত হয়। যেমন: মাদকদ্রব্যের কারবার, মানি লন্ডারিং ইত্যাদি।
ইসলামি পণ্ডিতদের মতামত:
- হালাল মনে করার কারণ: ক্রিপ্টোকারেন্সিকে মুদ্রার বিকল্প হিসেবে দেখা যেতে পারে এবং মুদ্রা বিনিময় ইসলামে অনুমোদিত।
- হারাম মনে করার কারণ: ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য অস্থির এবং এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এটি জুয়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে অবস্থান স্পষ্ট করল বাংলাদেশ ব্যাংক
ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনে বিরত থাকতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এসব ভার্চুয়াল মুদ্রা কোন দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষের দ্বারা ইস্যু করা নয়। তাই এর বিপরীতে কোন আর্থিক দাবির স্বীকৃতিও থাকে না।
ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনে বিরত থাকতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, এসব ভার্চুয়াল মুদ্রা কোন দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষের দ্বারা ইস্যু করা নয়। তাই এর বিপরীতে কোন আর্থিক দাবির স্বীকৃতিও থাকে না।
সম্প্রতি দেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার অবস্থান পরিষ্কার করে আজ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। একে ‘স্পষ্টীকরণ বিজ্ঞপ্তি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) লেখা এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রিপ্টোকারেন্সির সংরক্ষণ, লেনদেন অপরাধ নয় বলে মন্তব্য করেছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই অবস্থানের কথা গণমাধ্যমে আসার ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, একটি নির্দিষ্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার গোপনীয় ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক হতে পত্রের মাধ্যমে প্রেরিত মতামতের অংশ বিশেষ কোন কোন পত্রিকায় খণ্ডিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে যা কোনক্রমেই সাধারণভাবে প্রচারযোগ্য নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায় যে ক্রিপ্টোকারেন্সি, যেমন বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, রিপল ও লাইটকয়েন বিভিন্ন জায়গায় লেনদেন হচ্ছে। এসব ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কোনো দেশের বৈধ কর্তৃপক্ষ ইস্যু করে না।
ফলে এ মুদ্রার বিপরীতে কোনো আর্থিক দাবি স্বীকৃত নয়। এসব মুদ্রায় লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনুমোদন করে না। সে কারণে এর ব্যবহার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭; সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ সমর্থন করে না।
অনলাইনে নামবিহীন বা ছদ্মনামধারী প্রতিসঙ্গীর সঙ্গে লেনদেনে অনিচ্ছাকৃতভাবে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধবিষয়ক আইন লঙ্ঘন হতে পারে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। ওই অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ক্রিপ্টোকারেন্সি মানে কী?
ক্রিপ্টোকারেন্সি হল এক ধরনের ডিজিটাল মুদ্রা যা ইন্টারনেটের মাধ্যমে লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না বরং একটি বিকেন্দ্রীকৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য:
- ডিজিটাল: ক্রিপ্টোকারেন্সি শুধুমাত্র ডিজিটাল আকারে বিদ্যমান থাকে। এটি কোনো কাগজের নোট বা ধাতুর মুদ্রার মতো শারীরিক আকারে পাওয়া যায় না।
- বিকেন্দ্রীকৃত: ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনো একক সংস্থা বা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না। এটি একটি বিকেন্দ্রীকৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয় যাকে ব্লকচেইন বলা হয়।
- সুরক্ষিত: ব্লকচেইন প্রযুক্তির কারণে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন খুবই সুরক্ষিত।
- স্বচ্ছ: ব্লকচেইন একটি পাবলিক লেজার, যেখানে সকল লেনদেনের রেকর্ড স্বচ্ছভাবে সংরক্ষিত থাকে।
- সীমিত সরবরাহ: অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সির সরবরাহ সীমিত। যেমন, বিটকয়েনের মোট সংখ্যা ২১ মিলিয়ন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কেন জনপ্রিয়?
- দ্রুত লেনদেন: ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে লেনদেন খুব দ্রুত সম্পন্ন হয়।
- কম খরচ: ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের খরচ অনেক কম।
- সার্বিক অ্যাক্সেস: ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে যে কেউ ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার কর
- আর্থিক স্বাধীনতা: ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে লেনদেন করা যায় যেখানে ব্যাংকিং সিস্টেম কাজ করে না।
ক্রিপ্টোকারেন্সির ঝুঁকি:
- মূল্যের অস্থিরতা: ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য খুব দ্রুত ওঠানামা করে।
- নিয়ন্ত্রণের অভাব: ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়।
- অবৈধ কার্যকলাপের ঝুঁকি: ক্রিপ্টোকারেন্সি অনেক সময় অবৈধ কার্যকলাপে ব্যবহৃত হয়।
- তথ্য চুরির ঝুঁকি: ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের সময় ব্যক্তিগত তথ্য চুরির ঝুঁকি থাকে।