চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
চুল পড়া একটি সাধারণ সমস্যা, যার সমাধানের জন্য বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় ও চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। আপনার জন্য কোন পদ্ধতিটি সবচেয়ে উপযুক্ত, তা নির্ণয় করতে আপনার চুল পড়ার কারণ জানা জরুরি।
চুল পড়ার কারণ
- জেনেটিক: পারিবারিক ইতিহাসে চুল পড়ার প্রবণতা থাকলে এই সমস্যাটি হতে পারে।
- হরমোনাল পরিবর্তন: মহিলাদের গর্ভাবস্থা, মেনোপজ, বা হরমোনাল ব্যাধি চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
- পুষ্টির অভাব: আয়রন, জিংক, প্রোটিন এবং ভিটামিনের অভাব চুল পড়া বাড়াতে পারে।
- ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ঔষধ চুল পড়ার কারণ হতে পারে।
- ত্বকের রোগ: সোরিয়াসিস, একজিমা ইত্যাদি ত্বকের রোগ চুল পড়া বাড়াতে পারে।
- তनाव: অতিরিক্ত মানসিক চাপ চুল পড়ার একটি সাধারণ কারণ।
- খুব বেশি চুল ধোয়া: দিনে একবারের বেশি চুল ধোয়া চুলের তেল কমিয়ে দেয় এবং চুল পড়া বাড়াতে পারে।
- চুলের যত্নে ভুল পদ্ধতি: চুলের যত্নে ভুল পদ্ধতি যেমন, খুব বেশি হিট ব্যবহার করা, টাইট চুল বাঁধা ইত্যাদি চুল পড়া বাড়াতে পারে।
চুল পড়া বন্ধ করার উপায়
- তেল ম্যাসাজ: নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, বা বাদাম তেল দিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করলে চুলের গোড়া শক্ত হয় এবং চুল পড়া কমে।
- অ্যালোভেরা জেল: অ্যালোভেরা জেল চুলের জন্য খুব উপকারী। এটি চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।
- মেহেদি: মেহেদি চুলের জন্য একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করে এবং চুলের গোড়া শক্ত করে।
- পেঁয়াজের রস: পেঁয়াজের রস চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে।
- ডিমের কুসুম: ডিমের কুসুমে প্রচুর প্রোটিন থাকে যা চুলের জন্য খুব উপকারী।
- মহিলাদের জন্য বিশেষ পদ্ধতি
- মেহেদি ও সরিষার তেল: ২৫০ মিলি সরিষার তেলে ২০টি মেহেদি পাতা ফুটিয়ে ঠাণ্ডা হলে ম্যাসাজ করুন। ২০ মিনিট পর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- ডিমের কুসুম ও মধু: ডিমের কুসুম ফেটিয়ে মধু মিশিয়ে চুলে লাগান। আধা ঘণ্টা পর ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
স্বাস্থ্য টিপস সম্পর্কে আরও পড়ুন
চুল পড়া রোগ নির্ণয়
চুল পড়া নির্ণয়ের জন্য, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা মাথার ত্বক, চুলের ধরণ, চিকিৎসা ইতিহাস, জীবনধারা এবং মানসিক চাপের মাত্রাগুলি মূল্যায়ন করেন। তারা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, পুষ্টির ঘাটতি, বা চুল পড়ায় অবদান রাখে এমন অন্তর্নিহিত চিকিৎসা পরিস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য পরীক্ষাগার পরীক্ষা করতে পারে। একটি টান পরীক্ষা প্রতিদিনের চুল পড়ার পরিমাপ করে, যখন স্ক্যাল্প বায়োপসি বা ট্রাইকোস্কোপি মাইক্রোস্কোপিক অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। কখনও কখনও, আপনার ডাক্তার মূল কারণ নির্ধারণ করতে ইমেজিং পরীক্ষা লিখতে পারেন।
চুল পড়ার চিকিৎসা
চুল পড়া মোকাবেলা করার সময়, সবাই প্রাকৃতিকভাবে চুল পড়া এড়ানোর উপায়গুলি অনুসন্ধান করতে আগ্রহী। চুল পড়া প্রতিরোধ এবং চিকিত্সা চুল পড়ার ধরন এবং কারণের উপর নির্ভর করে বহুমুখী পদ্ধতির সাথে জড়িত। পুরুষ এবং মহিলাদের চুল পড়া নিয়ন্ত্রণের কিছু সাধারণ উপায় হল:
- একটি স্বাস্থ্যকর চুলের যত্নের রুটিন গ্রহণ করুন।
- তাপ এবং রাসায়নিক এক্সপোজার কমিয়ে দিন।
- চাপ কে সামলাও
- অ্যান্ড্রোজেনেটিক অ্যালোপেসিয়ার জন্য, আপনার ডাক্তার চুলের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতে এবং আরও ক্ষতি রোধ করতে মিনোক্সিডিল এবং ফিনাস্টেরাইডের মতো ওষুধগুলি লিখে দিতে পারেন।
- হরমোনের ভারসাম্যহীনতার জন্য বা আপনি জীবনযাত্রার পরিবর্তনগুলি গ্রহণ করতে পারেন এবং আপনার ডাক্তারের সুপারিশ অনুযায়ী সম্পূরক গ্রহণ করতে পারেন।
- প্লেটলেট সমৃদ্ধ প্লাজমা (পিআরপি) থেরাপি এবং লেজার চিকিত্সা চুলের ফলিকলগুলিকে উদ্দীপিত করতে পারে।
- অন্তর্নিহিত চিকিৎসা অবস্থার কারণে চুল পড়ার জন্য লক্ষ্যযুক্ত থেরাপি অপরিহার্য।
চিকিৎসা পদ্ধতি
- ঔষধ: মিনোক্সিডিল, ফিনাস্টেরাইড ইত্যাদি ঔষধ চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে।
- প্লাজমা থেরাপি: এই থেরাপিতে রক্ত থেকে প্লাজমা নিয়ে চুলের গোড়ায় ইঞ্জেক্ট করা হয়, যা চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে।
- চুল প্রতিস্থাপন: এটি একটি সার্জিক্যাল পদ্ধতি, যেখানে চুলের ফলিকল অন্য স্থান থেকে প্রতিস্থাপন করা হয়।
ডাক্তারের পরামর্শ
- ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ: চুল পড়ার কারণ নির্ণয় করতে এবং সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচন করতে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
- পরীক্ষা: থাইরয়েড, আয়রন, ভিটামিন ডি ইত্যাদি পরীক্ষা করে দেখুন।
চুল পড়া রোধ করার উপায়
- সুষম খাদ্য: প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি, এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান।
- তनाव কমান: ধ্যান, যোগাসন ইত্যাদি করার মাধ্যমে তनाव কমান।
- পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম নিন।
- চুলের যত্ন: চুলের যত্নে ভুল পদ্ধতি এড়িয়ে চলুন।
- নিয়মিত চুল ধোয়া: সপ্তাহে দুই-তিনবার মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
চুলের জন্য ভিটামিন ই
চুলের জন্য ভিটামিন ই ভীষণ উপকারী। চুল পড়া কমানো থেকে শুরু করে ঝলমলে স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুল পেতে এ ভিটামিন সহায়ক ভূমিকা রাখে। তাই ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি অনেকেই ভিটামিন ই ক্যাপসুল সরাসরি ব্যবহার করেন চুলে। বলা যায় চুলের সব ধরনের সমস্যার সমাধান টানতে সক্ষম এটি। নিয়মিত ভিটামিন ই ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হয়। কেবল তাই নয়, মজবুতও হয় চুলের গোড়া। এছাড়া অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের মাত্রা প্রতিরোধ করতেও সক্ষম ভিটামিন ই। সেসঙ্গে ফ্রি-ব়্যাডিকালস ধ্বংস করে এবং চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে।ফলে চুল থাকে ঝলমলে ও সুন্দর। এছাড়া স্ক্যাল্পের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতেও ভিটামিন ই এর জুড়ি মেলা ভার।
ভিটামিন ই সরাসরি চুলে, মাথার ত্বকে ব্যবহার করা যায়। তবে কেউ চাইলে বিভিন্ন হেয়ার প্যাক বানিয়েও ব্যবহার করতে পারেন এ উপকারী ভিটামিন।জেনে নিন তেমন দুটো হেয়ার প্যাক সম্পর্কে-
অ্যালোভেরা ও ভিটামিন ই
এই হেয়ার প্যাক তৈরির জন্য প্রয়োজন অ্যালোভেরা জেল, গোলাপ জল এবং ভিটামিন ই ক্যাপসুল।
একটি পাত্রে পরিমাণমতো অ্যালোভেরা জেল নিন, এর সঙ্গে মিশিয়ে দিন একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের নির্যাস। এর পরে সামান্য পরিমাণে গোলাপ জল মিশিয়ে তৈরি করে নিন হেয়ার মাস্ক। এটি চুলে লাগানোর পরে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করুন। চাইলে পুরো রাতও রাখা যেতে পারে।তারপরে শ্যাম্পু করে নিলেই মিলবে উপকার।
ভিটামিন ও জোজোবা অয়েল
জোজোবা অয়েলের সঙ্গে মিশে বেশ কার্যকরী হয়ে ওঠে ভিটামিন ই অয়েল। তাই এই দুই উপাদান মিশিয়ে যদি আপনার হেয়ার মাস্ক বানিয়ে নিতে পারেন, তাহলে যে উপকার মিলবেই, সে কথা এক প্রকার নিশ্চিত করে বলা যায়।
পাত্রে একটি ডিম ফাটিয়ে নিন। তার মধ্য়ে দিন ১ চামচ জোজোবা অয়েল এবং একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুলের নির্যাস। প্রতিটি উপকরণ মিশিয়ে তৈরি করুন হেয়ার মাস্কটি। চুলে লাগানোর পরে ১ ঘণ্টা অপেক্ষা করে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
চুল পড়া বন্ধ করার তেলের নাম
- ১।নারিকেল তেল: সুদূর প্রাচীনকাল থেকে এটি ব্যাবহার হয়ে আসছে।.
- ২।আমন্ড অয়েল।
- ৩।ক্যাস্টর অয়েল।.
- ৪।অনিয়ন অয়েল।
- ৫।নিম অয়েল।.
- ৬।তিলের তেল।.
- ৭।মাস্টার্ড অয়েল।.
- ৮।রোজমেরি অয়েল।
আরও পড়ুন
চুল পড়া: কারণ, চিকিৎসা এবং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
অতিরিক্ত চুল পড়া বন্ধ করার ও মাথায় নতুন চুল গজানোর ১০০% কার্যকরী উপায় / Hairfall solution