BPSC EducationBPSC News

আবু সাঈদ: একজন শহীদ শিক্ষার্থীর গল্প

শহীদ আবু সাঈদ

বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতীক

২০০১ সালে রংপুরের জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামে জন্মগ্রহণকারী আবু সাঈদ ছিলেন একজন মেধাবী ও দেশপ্রেমিক তরুণ। তিনি ছোটবেলা থেকেই অধ্যয়নে মনোযোগী ছিলেন এবং স্কুল জীবনে বহুবার মেধালাভ করেছিলেন। ২০২০ সালে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়ে তিনি নতুন প্রজন্মের আশা জাগিয়ে তুলেছিলেন।

 

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণ

 

২০২৪ সালে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়, সেখানে আবু সাঈদ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আন্দোলনের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একযোগে এই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

 

২০২৪-এর কোটা সংস্কার আন্দোলন

 

আবু সাঈদ ছিলেন ২০২৪ সালের বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের একজন কর্মী। ২০১৩, ২০১৮ সালের পর ২০২৪ সালের ৬ জুন আবারো কোটা সংস্কারের আন্দোলন শুরু হয়। তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক হিসাবে এই আন্দোলনে যোগদান করেন। তিনি রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ও রংপুর অঞ্চলে কোটা আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তিনি আন্দোলনকে বেগবান করতে ১৫ জুলাই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহাকে উল্লেখ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন:

 

“স্যার! (মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা), এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার স্যার! আপনার সমসাময়িক সময়ে যারা ছিলো সবাই তো মরে গিয়েছে। কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত।

আপনারাও প্রকৃতির নিয়মে একসময় মারা যাবেন। কিন্তু যতদিন বেচেঁ আছেন মেরুদণ্ড নিয়ে বাচুঁন। নায্য দাবিকে সমর্থন জানান, রাস্তায় নামুন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাড়াঁন। প্রকৃত সম্মান এবং শ্রদ্ধা পাবেন। মৃত্যুর সাথে সাথেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। আজন্ম বেচেঁ থাকবেন শামসুজ্জোহা হয়ে। অন্তত একজন ‘শামসুজ্জোহা’ হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের। ”

 

একজন মেধাবী ও দেশপ্রেমিক তরুণ

 

উপরোক্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমরা আবু সাঈদের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আরও কিছু বিস্তারিত তথ্য জানতে পারি:

 

শৈশব ও শিক্ষাজীবন: আবু সাঈদ তার শৈশবকাল কাটিয়েছেন রংপুরের গ্রামীণ পরিবেশে। ছোটবেলা থেকেই তিনি অধ্যয়নে মনোযোগী ছিলেন এবং তার মেধার প্রমাণ দিয়েছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে তিনি সর্বদা তার শ্রেণির মধ্যে প্রথম ছাত্রদের একজন ছিলেন। তার এই অসাধারণ শিক্ষাগত যোগ্যতা তার পরিবার ও সমাজের জন্য এক গর্বের বিষয় ছিল।

পারিবারিক পরিবেশ: আবু সাঈদ একটি বড় পরিবারে বেড়ে ওঠেন। তার বাবা-মা এবং ভাই-বোনেরা তার জন্য সবসময় অনুপ্রেরণার উৎস ছিলেন। তারা তার শিক্ষা ও উন্নয়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন।

সামাজিক যোগাযোগ: আবু সাঈদ তার সমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করতেন।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে আবু সাঈদ নতুন এক অধ্যায় শুরু করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

আবু সাঈদের ব্যক্তিত্ব:

 

উপরোক্ত তথ্য থেকে আমরা আবু সাঈদের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কিছু ধারণা পেতে পারি:

 

মেধাবী: আবু সাঈদ ছিলেন একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা তার ব্যক্তিত্বের একটি উজ্জ্বল দিক।

দেশপ্রেমিক: কোটা সংস্কার আন্দোলনে তার অংশগ্রহণ তার দেশপ্রেমিক মনোভাবের প্রমাণ।

সাহসী: আন্দোলনের সময় তিনি যে সাহস দেখিয়েছেন, তা তার ব্যক্তিত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

সামাজিক: তিনি সামাজিক কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতেন, যা তার সামাজিক মনোভাবের পরিচয় দেয়।

আবু সাঈদের জীবন আমাদের শিক্ষা দেয়:

মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ: এক যুবকের অকাল প্রয়াণ ও তার প্রেরণা

আবু সাঈদের জীবন আমাদের শিক্ষা দেয় যে, একজন মানুষ কীভাবে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে এবং সমাজের জন্য কাজ করতে পারে। তার মতো আমরাও নিজেদের মধ্যে থাকা প্রতিভা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে দেশ ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারি।

 

শহীদ হওয়া

 

২০২৪ সালের ১৬ জুলাই রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ মারাত্মকভাবে আহত হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

 

একজন শহীদ শিক্ষার্থীর স্মৃতি

 

আবু সাঈদের মৃত্যুতে গোটা দেশ শোকাহত হয়। তিনি শুধু একজন শিক্ষার্থীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন আদর্শবাদী যুবক, একজন সাহসী নেতা। তার মৃত্যু কোটা সংস্কার আন্দোলনকে আরও তীব্র করে তুলে। আবু সাঈদের বলিদান সারা দেশে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নতুন এক প্রেরণা জাগিয়ে তুলে।

 

আবু সাঈদের মৃত্যুর পর

 

আবু সাঈদের মৃত্যুর পর তার নামে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। তার নামে রাস্তা, চত্বর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের নামকরণ করা হয়। তাকে স্মরণ করে কবিতা, গান রচনা করা হয়। আবু সাঈদ আজও বাংলাদেশের তরুণদের কাছে একজন আদর্শ।

শহীদ আবু সাঈদ ছবি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Check Also
Close
Back to top button