প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
সর্বশেষ আপডেট খবর ২০২৩ দ্য ডেইলি স্টার বাংলার গুগল নিউজ চ্যানেলে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জরিপ অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে মোট বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ লাখ ৩০ হাজার, যা গত বছরের একই সময়ের ২৬ লাখ ১০ হাজার চেয়ে কম। বর্তমানে তা দ্বিতীয় প্রান্তিকে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ।
বাংলাদেশ জনসংখ্যার দিক দিয়ে অনেক ঘনবসতিপূর্ণ এবং বেকারত্ব প্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের অধিক বেকারত্বের কথা চিন্তা করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক একটি ঋণ সেবা চালু করে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে এখন সুদূর প্রবাসে গিয়ে স্বপ্ন পূরণের জন্য সুযোগ রয়েছে। যাদের মধ্যে আর্থিক সমস্যা থাকার কারণে প্রবাসে যেতে পারছেন না মূলত তাদের জন্যই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক এই ঋণের সেবাটি চালু করেছে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে এখন অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করা যাচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আমরা অনলাইনের মাধ্যমে আবেদনটি করতে পারি। রং পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, কি কি যোগ্যতা থাকলে এই নিতে পারবেন, লোন পরিষদের সময়সীমা এবং কত পারসেন্ট সুদ প্রদান করতে হবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা প্রদান করার জন্য মূলত আপনাদের মাঝে আজকের এই প্রতিবেদন। সম্পূর্ণ এই পোস্টটি পড়লে আপনারা গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্য ও প্রাপ্ত পেয়ে যাবেন। যাদের বৈদেশিক ঋণ প্রয়োজন তারা এই পোস্টটি থেকে অনেক উপকৃত হবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইনে আবেদন করা সম্ভব নাকি সম্ভব নয়?
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে অনলাইনে মাধ্যমে আবেদন করা যায় এই কথাটি সত্য, তবে অন্যদিকে কথাটি সম্পূর্ণ সত্যি নয়। অনলাইন এর মাধ্যমে সমস্ত ইনফরমেশন থেকে শুরু করে আবেদন ফরম ডাউনলোড করে সকল তথ্য আপনি নিজ হাতে পূরণ করে তা অবশ্যই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের নিকট সরাসরি উপস্থিত হয়ে জমা দিতে পারবেন। অনলাইন আবেদন বলতে মূলত কম্পিউটার থেকে আপনি যে আবেদনের ফর্মটি সংগ্রহ করবেন সেই বিষয়ে বলা হয়েছে।
অনলাইন এর মাধ্যমে সংগ্রহ করে সকল তথ্য ও উপাত্ত সঠিকভাবে পূরণের মাধ্যমে আপনি কোন রকম ভোগান্তি ছাড়াই শুধুমাত্র একদিন ব্যাংকে সরাসরি উপস্থিত হয়ে জমা দিলেই আপনার লোন নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে। আপনারা সকলেই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইনে আবেদন করা যায় কথাটি শুনে বিব্রত হবেন না, শুধুমাত্র প্রচারের উদ্দেশ্যে অনেক অসাধু ব্যক্তিগণ সরাসরি বলে থাকেন এখন অনলাইনের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন আবেদনটি করা যাচ্ছে, কথাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং ভুয়া তথ্য। তাই আপনারা মিথ্যে তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রতারিত হবেন না সকলেই আবেদন করার পূর্বে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করবেন।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে লোন নেওয়ার জন্য সঠিক আবেদন পদ্ধতি
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে লোন নেওয়ার জন্য নিম্নলিখিত আবেদন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে:
১। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সমূহঃ
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে দল নেওয়ার সময় নিম্নলিখিত কাগজপত্র গুলো আবশ্যকঃ
১। আবেদনকারী পাসপোর্ট সাইজের চার কপি ছবি (সত্যায়িত) ।
২। ভিসার মূল কপি (সত্যায়িত) ।
৩। জাতীয় পরিচয় পত্র বা পরিচয় পত্র না থাকলে জন্ম সনদের ফটোকপি (সত্যায়িত)।
৪। আবেদনকারী বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা সরকারি ঊর্ধ্বতর্ম কর্মকর্তা কর্তৃক প্রত্যয়ন সত্যায়িত কপি।
৫। শারীরিক যোগ্যতা সার্টিফিকেট (যদি থাকে)
৬। আবেদনকারী শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র। ( যদি থাকে)
৭। পারিবারিক সকল-সদস্যের পরিচিতি তথ্য বিস্তারিত ভাবে প্রদান করতে হবে।
৮। বর্তমান কর্মরত কর্মস্থানের ঠিকানা টেলিফোন নাম্বার ইমেইল ইত্যাদি (যদি থাকে)
৯। পূর্বের কোন কর্মদক্ষতার ওপর সনদ (যদি থাকে)।
১০। আবেদনকারীর নিজ হাতে পূরণ কৃত অভিবাসন ব্যয়ের বিবরণী ফর্ম সাবমিট।
১১। বিএমইটি/বোয়েসেল কর্তৃক ভিসার যথার্থতা যাচাই করন।
১২। গৃহীত ঋণ ফেরত দানের ফিরিস্তি প্রদান করতে হবে।
১৩। যে এজেন্সির মাধ্যম হয়ে আপনি বিদেশ যেতে চাচ্ছেন সেই এজেন্সির প্রত্যয়ন পত্র সাবমিট করতে হবে।
১৪। হলফনামা দাখিল করতে হবে।
১৫। সম্পত্তির বিবরণ প্রদান করতে হবে।
২. আবেদন ফরম পূরণ:
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ওয়েবসাইট থেকে বা ব্যাংকের যেকোনো শাখা থেকে অভিবাসন ঋণের জন্য আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন। আবেদন ফরমটি সঠিকভাবে পূরণ করে নিজ হস্তে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষ নিকট জমা দিন।
৩. আবেদন ফরম জমা:
আবেদন ফরম পূরণের পর প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের যেকোনো শাখায় গিয়ে জমা দিতে পারবেন। আবেদন ফরম জমা দেওয়ার সময় আবেদনকারীকে অবশ্যই সত্যায়িত কাগজপত্রের মূল কপি এবং সত্যায়িত কপির ফটোকপি জমা দিতে হবে।
৪. ঋণ অনুমোদন পত্র:
আবেদন ফরম ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ঋণ অনুমোদন করা হয়। ঋণ অনুমোদন হলে আবেদনকারীকে ঋণ অনুমোদনের নোটিশ প্রদান হয়। ঋণ অনুমোদন পত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫. ঋণ উত্তোলন:
ঋণ অনুমোদনের নোটিশ পাওয়ার পর আবেদনকারী ঋণ উত্তোলনের জন্য ব্যাংকের যেকোনো শাখা হতে টাকা উত্তোলন করতে পারবে। ঋণ উত্তোলনের সময় আবেদনকারীকে অবশ্যই ঋণ অনুমোদনের নোটিশ, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্ম নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হবে। অবশ্যই নিজে উপস্থিত থেকে ঋণ উত্তোলন করতে হবে অন্য কোন ব্যক্তি অনুমোদিত নয়।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে, আবেদনের জন্য আবশ্যিক বিষয়গুলো নিচে তুলে দেওয়া হল;
- আবেদনকারী অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে।
- আবেদনকারীর বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
- আবেদনকারীর ভিসা বৈধতা থাকতে হবে।
- আবেদনকারীর অভিবাসন ব্যয়ের জন্য ঋণ নেওয়ার উপযুক্ত হতে হবে।
- আবেদনকারীর আবেদনপত্র ও কাগজপত্র সঠিক ও নির্ভুল হতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে লোন নেওয়ার জন্য আবেদন করার সময় উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখবেন তাহলে আবেদন প্রক্রিয়া সহজতর হবে এবং ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন প্রয়োজনিয় কাগজপত্র
যেকোনো ধরনের ব্যাংক লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার ব্যক্তিগত সকল তথ্য বা ডকুমেন্ট সাবমিট করতে হবে। সকল ব্যাংকের ক্ষেত্রেই এই শর্তটি প্রযোজ্য।
যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন হবে ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার জন্যঃ
১। মূল ভিসার ফটোকপি।
২। সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের ৪ কপি ছবি।
৩। জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি অথবা জন্ম সনদ এর ফটোকপি।
৪। পাসপোর্টের প্রথম দুই পৃষ্ঠার ফটোকপি।
৫। বিএমএটি স্মার্ট কার্ড (বহির্গমন ছাড়পত্র) এবং প্রশিক্ষন সনদপত্রের ফটোকপি।
৬। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিক সনদপত্র।
উপরিয়ক্ত কাগজপত্র গুলো আবেদনের সময় সঙ্গে নিয়ে যাবেন, সকল ডকুমেন্টগুলোই আবেদনের সময় প্রয়োজন হবে। উপরিক্ত সকল ডকুমেন্ট এর বাইরে অন্য কাগজপত্র লাগলে সেটা আবেদন করার সময় বলে দেওয়া হবে।
প্রবাসী লোন পাওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা থাকা অবশ্যক
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে এই লোন পাওয়ার জন্য আপনার এই যোগ্যতা গুলো প্রয়োজন হবেঃ
১. অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক অর্থাৎ ১৮ বছর হতে হবে।
২. বাংলাদেশ-এর নাগরিক হতে হবে।
৩. শুধুমাত্র বিদেশে কর্ম করার উদ্দেশ্যে যেতে চাইলে আপনি লোন পাবেন। অবৈধ ভাবে কোন দেশে যেতে চাইলে লোন পাবেন না। ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কিংবা পরাশোনার জন্য ব্যাংক কর্তৃক কোনরকম ঋণ দেওয়া হয় না।
৪। রসিয়া কল্যাণ লোন পাওয়ার জন্য একজন জামিনদার প্রয়োজন হবে সে আপনার নিকটস্থ কোন আত্মীয় বা পরিবার বর্গের মধ্যে হতে হবে। আপনি যখন বিদেশে অবস্থান করবেন তখন সেই জামিনদার ব্যাঙ হতে সকল ধরনের লেনদেন দেখাশোনা করবেন। লোন নেওয়ার সময় জামিনদার এমন একজন ব্যক্তির হতে হবে যে আর্থিকভাবে স্বচ্ছ এবং ঋণের পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে সঠিক সময়ে পরিষদের সক্ষম।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার নিয়ম। বাৎসরিক সুদের হার কত। টাকা লোন নেওয়া যায় ব্যাংক থেকে?
১। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে আপনি সর্বোচ্চ ১ লক্ষ্য থেকে সর্বোচ্ছ ৩ লক্ষ্য টাকা প্রবাসী অভিবাসন লোন নিতে পারবেন।
২। প্রবাসীদের জন্য অভিবাসন লোন সর্বোচ্ছ সময়সীমা ২ বছর।
৩। প্রবাসী অভিবাসন লোন ১০ অথবা ২২ টি কিস্তির মাধ্যমে শেষ করতে হয়। ১ বছর মেয়াদি হলে ১০টি কিস্তি এবং ২ বছর মেয়াদি হলে ২২টি কিস্তির মাধ্যমে ঋণ পরিশধ করতে হবে। ঋণ নেওয়ার প্রথম ২ মাস কিস্তি দিতে হবেনা, তৃতীয় মাস থেকে শুরু করে প্রতি মাস কিস্তি দিতে হবে। শুধু মাত্র সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে ১০ টি কিস্তিতে এক বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করতে হয়।
৪। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রবাসী অভিবাসন লোনের জন্য সুদ দিতে হয় ৯% শতাংশ হারে।
উপসংহার
আজকের পোস্টটিতে আমরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে কিভাবে লোন নিবেন অনলাইনে আবেদন করার মাধ্যমে তার সত্যতা তুলে ধরেছি এবং আবেদন করার সম্পূর্ণ নিয়ম অভিবাসন জ্বীনের ধরন এবং সকল প্রকারের ঋণ গ্রহণের যে নিয়মাবলী সে সম্পর্কে বিস্তারিত আপডেট সংবাদ আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি।
আমাদের বিস্তারিত সকল প্রতিবেদনটি পড়ে যদি আপনারা সঠিকভাবে আবেদন করেন এবং আপনি যদি সক্ষম হন ঋণ নেওয়ার উপযুক্ত হিসেবে তাহলে অবশ্যই আপনারা ঋণ নিতে পারবেন। আবেদন করার সময় কোনরকম সমস্যার মধ্যে পড়লে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে।
আমরা এই পোস্ট-এ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লোন অনলাইন আবেদন করার সত্যতা তুলে ধরেছি এবং সঠিক নিয়মে অভিবাসন ঋণের জন্য আবেদন করার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক তাদের প্রবাসী লোন/অভিবাসন লোনের নিয়ম প্রতিনিয়ত আপডেট করে থাকে। তাই যদি আমাদের এই পোস্ট-এর কোন লেখা যদি আপনার ঋণ আবেদন করার সময় না মিলে তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানানোর জন্য অনুরোধ করছি।