Othersস্বাস্থ্য টিপস

খুশকি দূর করার সহজ উপায় !

চুলের অন্যতম শত্রু হলো খুশকি।এটি সাধারণত সমস্যা মনে হলেও অনেকটা ভোগান্তির কারণ হতে পারে। এটি নারী-পুরুষ সকলের হয়। খুশকি দূর করার জন্য কেমিক্যাল মত উপাদান ব্যবহার করলে উপকারের বদলে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় ঘরোয়া উপায় মেনে প্রতিকার করতে পারলে। আমরা চুলের মধ্যে যে নারিকেল তেল ব্যবহার করি তার মাধ্যমে পুষ্টি দূর করা সম্ভব।

নারিকেল তেল সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে পুরস্কৃত দূর হবেই, সেই সঙ্গে চুল হবে প্রাণবন্ত ও ঝলমলে । সাধারণত বিভিন্ন কারণে পুষ্টি হয়ে থাকে। বিশেষ করে দূষণ , অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ইত্যাদি হতে খুশকি হয়ে থাকে। খুশকির কারণে চুল অতিরিক্ত পড়ে যাওয়া, চুল রুক্ষ হয়ে যাওয় , মাথার ত্বকে সংক্রমণসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। চলুন দেখে নেওয়া যাক খুশকি দূর করার উপায় গুলো কি কি?

গরম নারিকেল তেল ম্যাসাজ

গরম নারিকেল তেল ম্যাসাজ করতে হলে সর্বপ্রথম আমাদেরকে নারিকেল তেল গরম করে নিতে হবে। তবে খুব বেশি গরম অবস্থায় ব্যবহার করা যাবে না, এতে করে হিটে বিপরীত হতে পারে। তেল গরম করার পর কিছুক্ষণ রেখে দিন। হালকা গরম অবস্থায় এলে আঙ্গুলের সাহায্যে ভালোভাবে স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ করুন।

এভাবে গরম তেলটি ১৫ মিনিট ব্যবহার করুন। এরপর পুরো চুলে ভালোভাবে তেল লাগিয়ে দিন। এভাবে রেখে দিন প্রায় আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টার মত। এরপরে ভালোভাবে শ্যাম্পু অথবা সাবান দিয়ে মাথা ভালো করে ধুয়ে নিন। এতে আপনার চুলগুলো ঝলমলের সুন্দর হবে এবং খুশকি গুলো আর থাকবে না।

নারিকেল তেল ও লেবুর ব্যবহার

নারিকেল তেলের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে তা খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। সেজন্য দুই টেবিল চামচ নারিকেল তেলের সঙ্গে এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে দিতে হবে। এরপরে খুশকুনি যুক্ত জায়গায় চুলে ভালো করে লাগিয়ে দিতে হবে। এভাবে প্রতিদিনে প্রায় ৩০ মিনিট নারিকেল তেল ও লেবুর রস রেখে দিতে হবে। এরপরে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

খুশকি হওয়ার বিভিন্ন কারণ

প্রকৃতপক্ষে খুশকি কোন রোগ বা রোগের লক্ষণ নয়। মাথায় লোমকূপে ময়লা জমে এবং ছত্রাকের প্রভাবে সাধারণত খুশী হয়ে থাকে। নিম্নে খুশি তৈরি হওয়ার কিছু অবস্থা বর্ণনা করা হলোঃ

১। শুষ্ক ত্বক: শীতের সময় আবহাওয়া আদ্রতা কমে যাওয়ার ফলে দেহের ত্বকের পাশাপাশি মাথার তর্ক শুষ্ক হয়ে যাওয়ার কারণে খুশকি বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া এ সময় বাইরে ঠান্ডা বাতাস ও ঘরের তুলনামূলক গরম বাতাসের ফলে তাপমাত্রা যে অসময়স পূর্ণতা দেখা যায় সে কারণেও খুশকি হয়ে থাকে।

২। চুল যথেষ্ট পরিমাণ না আজরানো; যথেষ্ট পরিমাণ না আঁচড়ালেও খুশকি হতে পারে। যদি চুল কম আঁচড়ানো হয় তাহলে মাথার ত্বকের চামড়ার ঝরে যাওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। ফলে মাথায় খুশকির সৃষ্টি হয়।

৩। মাথায় অতিরিক্ত তৈল ব্যাবহার

যারা মাথায় অতিরিক্ত তৈল ব্যবহার করে তাদের খুশকির সংক্রমণ বেশি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত ব্যবহার করা তেল স্তুপ আকারে চুলের গোড়ায় জমা হয়ে পরবর্তীতে সেখানে ছত্রাকের প্রাদুর্ভাব ঘটে যার ফলে মাথায় খুশকির পরিমান বেড়ে যায়।
৪। শ্বেত প্রদর জাতীয় অসুখে আক্রান্ত হ

ঈস্ট জাতীয় ( শ্বেত প্রদর জাতীয় ) অসুখ বা এলার্জির সমস্যা আছে এরুপ ব্যক্তিদের খুশকির প্রবণতা বেশী লক্ষ্য করা যায়। মহিলাদের এ সমস্যা বেশী পরিলক্ষিত হয়। সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি ও ঈস্ট কাউন্টারএক্ট করে ও খুশকি হওয়ার প্রবণতাকে বাড়িয়ে তোলে।  
৫। পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্যাম্পু না করা

যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্যাম্পু না করা হয় তাহলে মাথার ত্বক অপরিষ্কার থাকে। এর ফলেও মাথায় খুশকির উৎপত্তি হতে পারে।

৬। সঠিক খাদ্যাভাসের অভাব

সঠিক খাদ্যাভাসের অভাবও খুশকির অন্যতম কারণ। যদি গৃহীত খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন বি ও জিংক না থাকে তাহলেও খুশকি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এছাড়া অধিক পরিমাণে চর্বি জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করলেও খুশকি হতে পারে।
৭। ম্যালেসেজিয়া নামক ফাঙ্গাসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া  

সকলের স্ক্যাল্পেই ম্যালেসেজিয়া নামক এক ধরণের ফাঙ্গাস অল্প পরিমাণে থাকে এবং তেমন কোন সমস্যার সৃষ্টি করে না। তবে মাথার ত্বকে ফাঙ্গাসটির পরিমাণ অতিরিক্ত বেড়ে গেলে তা ত্বকের ক্ষরিত তেল শোষণ করে নেয়। এর ফলে স্ক্যাল্প অতিরিক্ত ত্বকীয় কোষ উৎপাদন করে থাকে। এ সকল অতিরিক্ত কোষ মৃত হলে স্ক্যাল্প ও চুলের তেলের সাথে মিশে খুশকির সৃষ্টি করে।
৮। অতিরিক্ত মানসিক চাপ

অতিরিক্ত মানসিক চাপও খুশকির একটি অন্যতম কারণ। যারা অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকেন তাদের খুশকি হওয়ার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়।

৯। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া

যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের খুশকি বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া বিশেষ কিছু রোগ যেমন- পারকিন্সন ডিসিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক, সেন্সিটিভ ত্বক ও ত্বকের সমস্যা (সোরিয়াসিস, একজিমা) ইত্যাদি যাদের রয়েছে তাদেরও খুশকির প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। কিছুদিন আগের একটি গবেষণায় পাওয়া যায় যে ১০.৬% মানুষ যাদের এইচ.আই.ভি আছে তাদের খুশকির সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। 

১০। পানির সমস্যার কারণে

অনেকসময় পানির সমস্যার কারণেও খুশকি হতে পারে। যদি পানিতে ক্লোরিনের পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে ত্বক তাড়াতাড়ি শুষ্ক হয়ে যায় যা মাথায় খুশকির কারণ হয়ে ওঠতে পারে।

খুশকির চিকিৎসা:

মাথার ত্বকে ম্যালেসেজিয়া নামক ফাঙ্গাসের  পরিমাণ কবি আনা বা নষ্ট করতে পারলে খুশি হয়ে যাবে। পুশকির দূর করার জন্য ডাক্তারগণ একমাত্র বিজ্ঞানভিত্তিক ছত্রাক শ্যাম্পু কিটা কোনাজল ব্যবহার উপদেশ দিয়ে থাকেন।

এই শ্যাম্পু ব্যবহারের নিয়ম হলো খুশকি দূরীকরণে চুল ধুয়ে তাতে কিটোকোনাজল 2% শ্যাম্পু লাগিয়ে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুইবার করে ২-৪ সপ্তাহ ব্যবহার করলে খুশকি কমে যাবে।

যাদের নিয়মিত খুশকি হয় তারা ১ বা ২ দুই সপ্তাহ পরপর প্রতিরোধক হিসেবে এই শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও এই শ্যাম্পু টি ব্যবহার করলে মাথার ত্বকে চুলকানি কমে, মাথার চুল পড়া বন্ধ হয়ে যায়। এবং আক্রান্ত ব্যক্তি বিবৃতকার পরিচিতি থেকে মুক্তি পেতে পারে। যদি কারো ফাঙ্গাল বা অন্যান্য একজিমা জাতীয় অসুখ না থাকে তাহলে এই শ্যাম্পু ব্যবহারে খুশকি ৯৫% ভাল হয়ে যাওয়ার কথা। অবশ্য যদি ইনফেকশন হয়ে যায় বা চুলকানি বেশি হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করা লাগতে পারে।।

খুশকি প্রতিরোধে করনীয়:

১। শ্যাম্পু ব্যবহার

  • যাঁদের প্রায়ই খুশকি হয় তাঁরা নিয়মিত চুলে পরিমিত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন।

২। মাথায় স্কার্ফ ব্যবহার 

  • বাইরে বের হলে ধুলোবালি মাথায় জমে খুশকির প্রাদুর্ভাব বাড়িয়ে তোলে। তাই এই সমস্যা দূর করতে মাথায় স্কার্ফ বা ওড়না ব্যবহার করা যেতে পারে।

৩। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন 

  • চুলের খুশকি নিয়ন্ত্রণে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয়। এজন্য মাথার ত্বক ভালো রাখতে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়া সহ চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করতে হবে।

৪। পরিষ্কারপরিচ্ছন্নতা  

  • খুশকিমুক্ত চুলের জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই গুরুত্বপুর্ণ। চুল অপরিষ্কার থাকলেই খুশকি বেশি হয়। তাই নিয়মিত চূল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

৫। ভেজা চূল জলদি শুকিয়ে নেওয়া

  • ভেজা অবস্থায় চুল বেঁধে রাখা ঠিক নয়। এজন্য গোছলের পর যত দ্রুত সম্ভব চুল ভালো করে মুছে নিতে হবে। প্রয়োজনে ধীরে ধীরে মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ে নিতে হবে। এছাড়া চুল শুকানোর জন্য হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার না করে ফ্যানের বাতাসে শুকিয়ে নেওয়া ভালো।
  • খুশকি হলে দ্রুত তার প্রতিকার করা দরকার। নইলে এই সমস্যা থেকে চুলপড়াসহ নানা সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই খুশকি প্রতিরোধে শ্যম্পু ব্যবহারের পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ও খাবারের বিষয়েও সমান মনযোগী হওয়া প্রয়োজন।
খুশকি দূর করার সহজ উপায় !
খুশকি দূর করার সহজ উপায় ! 3

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button