শরীরে ভিটামিন সি এর অভাব হলে কি ঘটতে পারে?
আসসালামু আলাইকুম, আশা করছি আল্লাহর রহমতে সকলে ভালো আছেন। আপনারা অনেকেই জানেন না , যে ভিটামিন সি এর অভাবে আমাদের কি কি হতে পারে। তাই আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলে ভিটামিন সি এর অভাবে শরীরে কি কি ঘাটতি হতে পারে এ বিষয়ে আলোচনা করব। আশা করছি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে থাকলে আপনিও জানতে পারবেন শরীরে ভিটামিন সি এর অভাবে কি হতে পারে। এবং এর উপকারিতা কি কি। তাই চলুন দেখে নেই আমাদের আজকের আর্টিকেলটি
শরীরে ভিটামিন সি-র ঘাটতি হলে কী হয়?
শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় ভিটামিন সি। এ ছাড়া ত্বক ও হাড়ের কোলাজেনের সুরক্ষা দিতে, দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ভিটামিন সি উপকারী। ভিটামিন সি-র অভাবে অবসন্নতা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
টকজাতীয় সব ধরনের ফলে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। লেবু, মাল্টা, কমলা, জলপাই, আমলকী, আনারস ইত্যাদিতে ভিটামিন সি থাকে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, কাঁচামরিচেও ভিটামিন সি পাওয়া যায়।
জীবনযাত্রাবিষয়ক ওয়েবসাইট ফিট ডে জানিয়েছে ভিটামিন সি-র ঘাটতি হলে যেসব সমস্যা হয় সেগুলোর কথা।
- ১. যাঁদের শরীরে ভিটামিন সি-এর অভাব রয়েছে, তাঁরা খুব সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। শরীরে শক্তি কমে যায়, অবসন্ন হয়ে পড়েন। দীর্ঘমেয়াদি অবসন্নতা অনেক রোগেরই লক্ষণ। তাই দীর্ঘদিন ধরে অবসন্ন বোধ করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- ২. শরীরে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি হলে বিরক্তিভাব দেখা দেয়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
- ৩. যাদের শরীরে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি হয়, তাদের হঠাৎ করে ওজন কমে যেতে পারে।
- ৪. ভিটামিন সি-এর অভাব হলে গিঁটে ব্যথা বা পেশিতে ব্যথার সমস্যা হয়।
- ৫. ভিটামিন সি-এর অভাব হলে দেহে কালশিটে দাগ পড়ে। যদি শরীরে এ রকম দাগ বেশি হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- ৬. ভিটামিন সি দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে। এর ঘাটতি দেখা দিলে এসব অংশে সমস্যা হতে পারে। এ ছাড়া এর অভাবে মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার সমস্যা হতে পারে।
- ৭. ত্বক ও চুল শুষ্ক হয়ে যাওয়াও ভিটামিন সি-এর ঘাটতির লক্ষণ।
- ৮. ভিটামিন সি-এর ঘাটতি হলে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়।
ভিটামিন সি’র উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো ছাড়াও ত্বক সুন্দর রাখার পাশাপাশি দাঁতও ভালো রাখতে সাহায্য করে।
এ সম্পর্কে রাজধানীর পান্থপথ অ্যাস্থেটিক স্কিন লেজারের পুষ্টিবিদ তায়েবা সুলতানা বলেন, “ভিটামিন সি মানব দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট। ভিটামিন সি- ত্বক, দাঁত ও চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যা মানব দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।”
“এছাড়া শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন শোষণে সহায়তা করে। সাধারণ সর্দি-কাশিতেও এই ভিটামিন বেশ উপকারী। তবে ঠাণ্ডায় আক্রান্ত হওয়ার আগ থেকে, পর্যাপ্ত ভিটামিন সি গ্রহণ করলে বেশি উপকার পাওয়া যায় বলে প্রমাণিত।”
এই ভিটামিন পরিচিত ফল এবং বিভিন্ন শাক–সবজি যেমন: আমলকী, লেবু, কমলালেবু, পেয়ারা, জাম্বুরা, আমড়া, পেয়ারা, পেঁপে, কাঁচামরিচ— ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণে থাকে। তবে যেহেতু আমাদের শরীর ভিটামিন সি জমা করে রাখতে পারে না তাই প্রতিদিন গ্রহণ করা প্রয়োজন, জানালেন তায়েবা সুলতানা।
তিনি বলেন, “বয়স ভেদে এর চাহিদা বিভিন্ন রকম হলেও সাধারণত একজন পূর্ণ বয়স্ক পুরুষের দৈনিক ৯০ মি.গ্রা. এবং নারীর ৮০ মি.গ্রা. পরিমাণই যথেষ্ট।”
তাছাড়া ভিটামিন সি’তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদপিণ্ডে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায় বলে জানান তায়েবা সুলতানা।
স্বাস্থ্যবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে ভিটামিন সি’র আরও কিছু উপকারিতা সম্পর্কে জানানো হয়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
ভিটামিন সি-তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের কোষ ও ডিএনএ-এর ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করে।
তাছাড়া এই ভিটামিন শরীরের ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো রেখে ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করার ক্ষমতা বাড়ায় এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
এই ভিটামিন প্রায় সব ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
বিজ্ঞানীদের মতে, ভিটামিন সি সরাসরি ক্যান্সারের কোষে আঘাত করে না। বরং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো রেখে ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে।
হাড় ভালো রাখে
ভিটামিন সি হাড়ের ক্ষয় বা ভঙ্গুর হওয়ার প্রবণতা কমাতে সাহায্য করে। তাছাড়া মেনোপজ পরবর্তী সময়ে যেসব নারীরা ভিটামিন সি বেশি গ্রহণ করেন তাদের হাড় অন্যদের তুলনায় বেশি মজবুত থাকে।
চোখ ভালো রাখে
ভিটামিন সি-তে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চোখের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ওজন কমায়
পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহণ করে শরীর থেকে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ চর্বি কমানো সম্ভব। এক্ষেত্রে ভিটামিন সি অ্যামাইনো অ্যাসিড এল-কারনাইটাইন সমন্বয় করে এবং চর্বি হজম করে তা শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে।