ইসলামে সুন্নতি বিয়ের নিয়ম নীতি যা জানা দরকার

ইসলামে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি ফরজ এবাদত । আমাদের সকলেরই সুন্নতি বিয়ে সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক। বিয়ে হল এমন একটি পবিত্র বন্ধন যা মানুষের মধ্যে সামাজিক আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক সম্পর্ক বৈধকরণের একটি রীতিনীতি যা সৃষ্টির শুরু থেকে সকল শর্ত এবং নিয়ম মেনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী সুন্নতি তরিকায় যে কার্যটি সম্পাদন করা হয় পরস্পরের বন্ধন চিরস্থায়ীকরণের উদ্দেশ্যে সেই মাধ্যমটিকে আমরা মূলত বিবাহ বলে জেনে থাকি। আসন আজকে জেনে নেওয়া যাক ইসলামে সুন্নতি বিয়ে নিয়ম সমূহ।
সুন্নতি বিয়ে পড়ানোর নিয়ম
আসুন এইবার জেনে নেওয়া যাক ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক সুন্নতি বিবাহ পড়ানোর জন্য যেসব রীতিনীতি অনুসরণ করা হয়।
১। সুন্নতি বিয়ের জন্য অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক একজন পুরুষ এবং প্রাপ্তবয়স্ক একজন নারী উভয়ের সম্মতি থাকা আবশ্যক।
২। বিয়ের জন্য একজন কনের অভিভাবকের সম্মতি নেওয়া অত্যন্ত আবশ্যক।
৩। এরপরে সুন্নতি বিয়ের নিয়ম মেনে বিয়ের মোহরানা ধার্যজন করা হয়।
৪। বিবাহের জন্য সাক্ষী থাকা বাধ্যতামূলক।
৫। সুন্নতি বিবাহ সম্পাদন করার জন্য বিবাহের খুতবা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমাম এই কাজটি সম্পাদন করে থাকেন অথবা সমাজে রেজিস্টার কৃত যে সকল কাজই সাহেবগঞ্জ আছেন তাহারা এ সকল দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং নির্ভুলভাবে পালন করে থাকেন।
উপরিক্ত সকল নিয়ম ছাড়াও আরো কিছু নিয়মকানুন রয়েছে যা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ
ইযারা কবুল করার পরে বিবাহর খুতবা শেষ হলে ইজাব কবুল হলে ব্যবহার প্রস্তাব দেওয়া এবং প্রস্তাব গ্রহণ করার মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। ইজাব কবুল সাধারণত স্থানে পক্ষের অভিভাবক এবং বরের মধ্যে সংঘটিত হয়। কোনের অভিভাবকগণ বরের দিকে তাকিয়ে তাকে বলবে “আমি আমার মেয়ে বা কন্যা তোমার কাছে দিয়ে দিলাম দেনমোহর হিসেবে এত পরিমাণ টাকা দিয়ে” বর তখন বলবে আমি গ্রহন করলাম অথবা কবুল করে নিলাম বা “কবুল” বলবে। এরপরে মোহর বিবাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মোহর হল বিবাহের বিনিময়ে কন্যাকে দেওয়া একটি অর্থ মূলক বা বস্তুর প্রতিশ্রুতি বরপক্ষের মাধ্যমে পরিষদ আবশ্যক এটি না করলে বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে।
ইসলামে বিয়ের নিয়ম নীতি সমূহ
গুরুত্বপূর্ণ কিছু পয়েন্ট তুলেধরা হল যা অবশ্যই সুন্নতি বিয়ে জন্য আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবেঃ
- বিবাহের খুতবা
- ইজারা কবুল
- মোহর
- সাক্ষী
বিবাহের সাক্ষী থাকা আবশ্যক। সাক্ষীরা বিবাহ অনুষ্ঠানের উপস্থিত থাকেন এবং বিবাহের সাক্ষী বা প্রমাণ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিবাহে যাহারা সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকেন জ্ঞানী বিশুদ্ধ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন এবং ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান সম্পন্ন হয়ে থাকে।
ইসলামের সকল নিয়ম-নীতি মেনে বিবাহ সম্পাদনের পর বর কনেকে তার বাড়িতে নিয়ে আসে এবং বিয়ের পর পর এবং কনেকে একটি নির্দিষ্ট ঘরে রাখা হয় এবং তারা “শাদীর রাত্রি” পালন করে। ইসলামে সুন্নতি বিবাহে আরো কিছু নিয়ম আমাদের সমাজের প্রচলিত আছে তা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
- বিবাহ সম্পাদনের জন্য মসজিদের অনুষ্ঠান করতে দেখা যায়
- আমাদের সমাজে বিবাহ অনুষ্ঠানে ইসলামী সুন্নতি নিয়ম নীতি অনুসরণ করে কোরআন তেলাওয়াত করা হয় এবং দোয়া মাগফিরাত কামনা করা হয়।
- বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পাদন হওয়ার পর সকল আত্মীয়-স্বজনকে অনুষ্ঠানে বৈঠক করে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
- বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন এটি সকল নিয়ম কানুন মেনে সঠিকভাবে সম্পাদন করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।

সুন্নতি বিয়ের ফজিলত সমূহঃ
বিয়ে একটি ইসলামের পবিত্র বন্ধন বিয়ের মাধ্যমে সুন্নতি তরিকায় একজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পাপ মুক্তভাবে জীবন যাপন করতে পারে।
ইসলামী সুন্নতি বিবাহের বন্ধনের মাধ্যমে মানুষের মানসিকতা আনতে থাকে এবং সামাজিকতা মূল্যবোধ দায়িত্ব গ্রহণের সক্ষমতা দায়িত্ব পালন ইত্যাদি বিষয়গুলো উন্নতি ঘটে।
বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার পর একজন নারী এবং একজন পুরুষ সন্তান-সন্ততি লাভ করে সুন্নতি তরিকার অবলম্বন করে।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম pdf
সুন্নতি বিয়ে সম্পর্কে যা জানলামঃ-
আমরা ইসলামে সুন্নতি বিয়ে সম্পর্কে উপরের তো সকাল আলোচনার মাধ্যমে কিভাবে সুন্নতি বিয়ে সংঘটিত হয় এবং সুন্নতি বিয়ের নিয়মাবলী এবং ফজিলত সমূহ সম্পর্কে বিস্তর এবং সু স্পষ্ট ধারণা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়েছি। মানুষ সামাজিক ভাবে বসবাস করতে গেলে ইসলামী সুন্নতি তরিকায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া আবশ্যক। বিবাহ এমন একটি পবিত্র বন্ধন যা মানুষকে সমস্ত রকম পাপ এবং পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকে। আমাদের সমাজে শান্তি-শৃংখলা এবং সমাজকে পাপ মুক্ত রাখতে সকল ঘরে শান্তি ও সুখকর অবস্থা বজায় রাখার জন্য সুন্নতি তরিকায় বিয়ের অপরিহার্যতা অপরিসীম।
সুন্নতি বিয়ে সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন উত্তরঃ
১। ইসলামে বিয়ের শর্ত কি কি?
- বর ও কনে উভয়েরই বিবাহে সম্মতি থাকা আবশ্যক।
- কনের অভিভাবকের থেকে অনুমতি অবশ্যই নিতে হবে।
- বিয়েতে দেনমোহর নির্ধারণ করা আবশ্যক।
- বিবাহের সাক্ষী থাকা আবশ্যক। উপস্থিত সাক্ষী গন অবশ্যই বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন হতে হবে।
- বিয়ের জন্য উভয়ের প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে ।
২। ইসলামে ছেলে মেয়েদের বিয়ের বয়স কত?
- ইসলামী সকল আইনশাস্ত্রবিদরা ছেলেদের জন্য বিয়ের উপযুক্ত বয়স ১৮ বছর এবং মেয়েদের জন্য ১৫ বছর বয়সকে বিয়ের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করেন।
৩। নিজে নিজে বিয়ে করার নিয়ম?
ইসলামে সুন্নতি বিয়ে নিয়ম এর মধ্যে নিজে নিজে বিয়ে করার নিয়ম নেই। ইসলামে সুন্নতি বিয়ের জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী হলো:
- বর ও কনের সম্মতি থাকা আবশ্যক।
- কনের অভিভাবকের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক।
- মোহর নির্ধারণ করা আবশ্যক।
- বিবাহের সাক্ষী থাকা আবশ্যক।